ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকার এক যুবদল নেতার বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের বাস ঢাকায় ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই অভিযুক্ত মুশফিকুর রহমান ফাহিম এই রুটের বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। এখন এককালীন বিপুল অঙ্কের চাঁদা ও মাসিক ভিত্তিতে চাঁদা চাইছেন বলে জানিয়েছেন পরিবহন নেতারা। গতকাল শনিবার সকালে শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন তারা। বিষয়টি জানতে পেরে মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে বহিষ্কার করে প্রাথমিক সদস্য পদ স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় যুবদল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী থানা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম। তিনি ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট একই এলাকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক হত্যা মামলার প্রধান আসামি। এ মামলায় কারাগারেও গেছেন। সম্প্রতি তাঁর বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ পাওয়া যায়।
শরীয়তপুর বাস মালিক সমিতি ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে জানান, ফাহিম দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর থেকে ঢাকামুখী বাস মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে আসছেন। তিনি কিছুদিন আগে ‘শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের’ মালিকদের কাছে এককালীন ৫ কোটি টাকা ও মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে নিজ মালিকানাধীন দুটি বাস শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসে যুক্ত করার শর্ত দেন।
পরিবহন মালিকরা চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রতিশোধ হিসেবে ফাহিমের লোকজন যাত্রাবাড়ী এলাকায় শরীয়তপুর থেকে আসা বাসে একের পর এক হামলা করে ভাঙচুর করছে। তিন দিনে এই রুটের ২৫টি বাসে ভাঙচুর চালানো হয়। হামলায় অন্তত ১০ জন পরিবহন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন নেতারা। শনিবার সকালেও যাত্রাবাড়ী এলাকায় আরও দুটি বাসে হামলা হয়েছে। এতে জেলার পরিবহন খাতে জড়িত ব্যক্তিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, জেলার কোনো কোনো বাস বিকল্প পথে পোস্তগোলা সেতু, জুরাইন ও ধোলাইপাড় হয়ে ঢাকায় আসা চেষ্টা করলেও হামলা হচ্ছে। ফাহিমের লোকজন পোস্তগোলা পার হলেই এসব বাসে হামলা করছে। ফলে শরীয়তপুরের বাস ঢাকায় আসা অসম্ভব হয়ে গেছে। হামলার শিকার একটি বাসচালক সোহাগ মিয়া বলেন, গত বৃহস্পতিবার সকালে শরীয়তপুর থেকে যাত্রী নিয়ে যাত্রাবাড়ী আসেন তিনি। যাত্রী নামিয়ে চৌরাস্তা মোড়ে পৌঁছালে হঠাৎ ১০-১২ জন মুখোশধারী হামলা চালায়। তারা বাসটি ভাঙচুর করে ও তাঁকে মারধর করে। এই সমস্যা থেকে মুক্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপদে গাড়ি চালাইতে চাই।’
শরীয়তপুর বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক চৌকিদার বলেন, যাত্রাবাড়ী টার্মিনাল থেকে তাদের বাসগুলো চলাচল করার কথা। কিন্তু জায়গা না পাওয়ায় চৌরাস্তা মোড় থেকে বাস ছাড়তে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে ওই এলাকার যুবদল নেতা ফাহিম মালিক সমিতির কাছে ৫ কোটি টাকা বা মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘দাবি না মানায় আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে, শ্রমিকরা মার খাচ্ছেন, বাস ভাঙচুর হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি– আমরা কোনো চাঁদা দিতে রাজি নই। আমরা চাই নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা ও আইনের শাসন। এ বিষয়ে প্রশাসন ও তাঁর দলীয় নেতারা ব্যবস্থা না নিলে শরীয়তপুরের জনগণকে নিয়ে পদ্মা সেতুতে ব্যারিকেড বসিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেব।’
যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ‘আমাদের কিছু বাস ওরা শরীয়তপুরে ঢুকতে দেন না। তাদের সেই অপরাধ ঢাকতে আমাকে চাঁদাবাজ বানানো হয়েছে। আমি যদি চাঁদা দাবি ও গাড়ি ভাঙচুর করে থাকি, তাহলে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’
শরীয়তপুর সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহন সুনামের সঙ্গে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছে। ৫ আগস্টের পর থেকেই ফাহিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় নানা পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন। শুরুতে তিনি প্রতি বাস থেকে ১০০-২০০ টাকা করে চাঁদা নিতেন। এখন এককালীন ৫ কোটি টাকা বা মাসে ১০ লাখ টাকা দাবি করছেন। অনেক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও একইভাবে চাঁদা আদায় করছেন। ফাহিমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে র্যাব-পুলিশের কাছে ১৫-২০টি অভিযোগ জমা হয়েছে বলেও শুনেছেন।
যুবদল থেকে বহিষ্কার
এদিকে দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবদল। শনিবার সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আওতাধীন যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিমকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।’ একই সঙ্গে ফাহিমের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও তারা আহ্বান জানিয়েছেন বিজ্ঞপ্তিতে।